December 22, 2024, 10:05 am
দৈনিক কুষ্টিয়া অনলাইন/
বাংলাদেশের চুয়াডাঙ্গা জেলার দামুড়হুদা উপজেলার মুন্সিপুর সীমান্তের নো ম্যান্স ল্যান্ডে ২ বাংলাদেশী কোন ভারতীয় নাগরিক মৃত মা কে শেষ বিদায় জানিয়েছেন। মৃত্যুর আগে তাদের মায়ের শেষ ইচ্ছে ছিল এটি। তাদের মা ফজিলা খাতুন (৭০) শুক্রবার ভারতের নদীয়া জেলার চাপড়া থানাধীন হাটখোলা সকালে নিজ বাড়িতে ইন্তেকাল করেন।
দুই বোন ডালিমুন ও রাবেয়া খাতুন বাংলাদেশের চুয়াডাঙ্গা জেলার দামুড়হুদা উপজেলার কুতুবপুর গ্রামে স্বামী-সংসার নিয়ে বসবাস করেন। ডালিমুনের বয়স ৫৫ বছর, রাবেয়ার ৫৩। তাদের জন্ম ভারতের নদীয়া জেলার চাপড়া থানাধীন হাটখোলা গ্রামে।
দুই বোনের মধ্যে ডালিমুনের বিয়ে হয় কুতুবপুর গ্রামে ও বাংলাদেশী নাগরিক হাফিজুর রহমানের সাথে আর রাবেয়ার বিয়ে হয় একই গ্রামের মজিবুর রহমানের সাথে প্রায় ৩২/৩৫ বছর আগে। তাদের সন্তান সন্ততি রয়েছে। নাগরিকত্ব রয়েছে বাংলাদেশের।
ওাবেয়ার স্বামী মজিবুর মারা যান ২০২০ সালে।
নদীয়ার হাটখোলা গ্রাম আর চুয়াডাঙ্গার কুতুবপুর গ্রাম একেবারে পাশাপাশি। মাঝখানে কাঁটাতারের একটি বেড়া।
ডালিমুনের স্বামী হাফিজুর জানান ফজিলা খাতুনের মৃত্যুর খবর পান সকালেই। ফজিলা তার লাশ তার মেয়েদের দেখাতে বলার বিষয়টি জানার পর হাফিজুর ডালিমুন ও রাবেয়াকে খবরটি দেন। ডালিমুন ও রাবেয়াও লাশ দেখার ইচ্ছে প্রকাশ করেন।
হাফিজ বিষয়টি লিখিতভাবে চুয়াডাঙ্গা ব্যাটালিয়ন-৬ বিজিবিকে জানান। বিজিবি তৎক্ষনাত ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনীকে (বিএসএফ) জানায়। বিএসএফ রাজি হলে শুক্রবার বিকেলে বিজিবি-বিএসএফ-এর সমন্বয়ে মুন্সিপুর সীমান্তের মেইন পিলার ৯৩ এর নিকট শূন্য লাইনে শান্তিপূর্ণভাবে মায়ের মরদেহ শেষ দর্শন করেন ডালিমুন ও রাবেয়া। তাদের ছেলে-মেয়েসহ নিকট আত্মীয়রা এসময় উপস্থিত ছিলেন।
শুক্রবার রাতে চুয়াডাঙ্গা-৬ বিজিবির পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল শাহ ইশতিয়াক স্বাক্ষরিত ইমেইলে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ভারতীয় ভূখণ্ডে মারা যাওয়া মাকে দেখতে বাংলাদেশে বসবাসরত সন্তানদের শেষ দেখার অনুরোধ করেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বিজিবি-বিএসএফের সমন্বয়ে মানবতামূলক কার্যক্রমের অংশ হিসেবে মৃতের নিকট আত্মীয় স্বজনদের উপস্থিতিতে শান্তিপূর্ণভাবে মরদেহ দেখানোর শেষ দর্শন কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়। মারা যাওয়া ভারতীয় নাগরিক জন্মসূত্রে ভারতীয় এবং স্বামীর সঙ্গে স্থায়ীভাবে ভারতে বসবাস করে আসছিলেন। মৃতের দুটি কন্যা সন্তান রয়েছে। বর্তমানে তারা বিবাহিত এবং স্বামী সন্তান নিয়ে বাংলাদেশে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, সীমান্তে শান্তি, সম্প্রীতি এবং উভয়ই সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মধ্যে সুসম্পর্ক উন্নয়নের অগ্রযাত্রার অংশ হিসেবে বিজিবি-বিএসএফ- এর মানবতামূলক কার্যক্রম উভয়ই দেশের সীমান্তে বসবাসরত জনগণের মধ্যে সুসম্পর্ক উন্নয়ন সাধিত হবে। ভবিষ্যতে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখার ক্ষেত্রে এটি মাইলফলক হিসেবে কাজ করবে। এছাড়াও উভয়ই সীমান্তে ভ্রাতৃত্ববোধ বৃদ্ধিতে আন্তঃরাষ্ট্রীয় সীমান্ত অপরাধ কমবে বলে আশা করা যায়।
বাংলাদেশের নাগরিক। স্বামী-সন্তান নিয়ে থাকেন চুয়াডাঙ্গা দামুড়হুদা উপজেলার কুতুবপুর গ্রামে। তাদের মা ফজিলা খাতুন (৭০) ভারতের নাগরিক। বসবাস করতেন নদিয়া জেলার চাপড়া থানাধীন হাটখোলা গ্রামে। শুক্রবার (২০ জানুয়ারি) সকালে নিজ বাড়িতে তার মৃত্যু হয়।
ডালিমুনের স্বামী হাফিজুর জানান একসময় এপাড়-ওপাড় খুব যাতায়াত করলেও এখন সীমান্ত রক্ষীদের কড়াকড়ি ও বয়স হয়ে যাওয়ার কারনে শশুর বাড়িতে খুব একটা যাতায়াত হয় না। প্রায় দুই বছর হলো তিনি শশুর বাড়ি যাননি।
তবে তিনি জানান তাদের সন্তানরা প্রায়ই যাতায়াত করেন।
তাদের বিয়ের বিষয়ে হাফিজুর জানান সেমসময় অন্য রকম পরিবেশ ছিল। এপাড়-ওপাড় খুব আত্মীয়তা চলতো। তিনি জানান এখনও এপাড়-ওপাড় বিয়ে সাদি হচ্ছে। এটা এই এলাকার একটি চল।
Leave a Reply